বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছে
যেখান থেকে আমরা আরোও ১০০ বছর পিছিয়ে যাব তা ছাড়া বৈকি আর কিছুই নয়। আমরা ধর্মের কথা বলে কিংবা রাজনীতিকে হাতিয়ার বানিয়ে যে নিজের
বাঙ্গালী সত্ত্বাকে বিকিয়ে দিতে পারি তার প্রমাণ ইতোমধ্যে পেয়ে গেছি। কেননা আমরা ১৪ কোটি বাঙ্গালী সত্তার
অহংকার জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনার কিংবা মসজিদের কার্পেট পুড়িয়ে দিতে দ্বিধা বোধ করছি না। এমন কি মসজিদ থেকে বোমা মারাকে বৈধ
করে ফেলেছি (বিভিন্ন দেশে মসজিদে বোমা হামলা হচ্ছে)। এখন হয়ত অনেকে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে
পারেন যে ভাই যেখানে ধর্ম ঠিকছে না সেখানে বাঙ্গালী সত্ত্বা কি? হ্যাঁ ঠিক আছে ভাই আমি মানছি কিন্তু
ভাই একবার ভেবে দেখবেন যদি নিজের সত্ত্বা বা বিবেককে বিসর্জন দিয়ে ধর্মকে রাজনীতি সাথে
মিশিয়ে রাজনীতি করা কিছু মানুষের দেখানো পথে চলেন তাহলে আপনার ধর্ম, বিবেক আর রাজনীতি আপনাকে কোথায় নিয়ে
যাচ্ছে। হ্যাঁ ভাই ঠিক আছে তারপরও মানছি যে
আমরা মুসলাম সুতরাং আমাদের ধর্মকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। কিন্তু ভাই একটু ভেবে দেখবেন কি? আমার এই দায়িত্ব তো কোন ধর্মের নামে
রাজনীতি করা কতিপয় সংগঠন গুলোকে দিতে পারি না। কেননা এদেশে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠা
যেমন সাধারণ একটা ব্যাপার তেমনি এই ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন গুলোর মধ্যে অনৈক্যও আরেকটি বড় ব্যাপার। আমি এক (মুসলমান) আমার ধর্ম এক এটাই
তো ইসলাম কিন্তু আমার খুব অবাক লাগে যখন দেখি এদেশে ধর্মকে পুঁজি করে গড়ে উঠা রাজনীতিক
প্রতিষ্ঠানের কোন অভাব নাই আরো অবাক হয় যখন দেখি এদের মধ্যে কোন ভালো কাজে মিল নাই। ভাই ধর্ম একটা জটিল এবং বোঝার বিষয়
এখানে রাজনীতি করার বিষয় না। আজ আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপি আলাদা আলাদা নিজস্ব একটি সংগঠন
কিন্তু আপনাদের মধ্যে আজও এক হওয়ার প্রবণতা দেখা গেলো না। আপনি হয়ত বলতে পারেন ধর্মের মধ্যেও
ভাগ আছে যেমন কাদিয়ানী, সুন্নী, শিয়া ইত্যাদি কিন্তু ভাই একবার ভেবে দেখুন তো এই ধর্মীয়
রাজনৈতিক নেতা গুলো শিয়া, সুন্নী ধর্ম নিয়ে এদেশে কতবার যুদ্ধ করেছে। ভাই আমি যুদ্ধ বলতে কিন্তু রগ কাটা
কিংবা লগি বৈঠার কথা বলছি না আমি বলতে চাইছি এই সব সংগঠন গুলো কতবার এদেশে শান্তির
ধর্ম ইসলাম প্রচারের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। হ্যাঁ আপনি এখন বলতে পারেন তারা তো ইসলামী প্রচার করছে, কিন্তু ভাই ইসলাম তো নিজের বিবেক সত্ত্বাকে
বিসর্জন দিতে বলেনি। কিংবা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করতে বলেনি আমার জানা
মতে। ভাই ভাইবেন না আবার আমি আওয়ামীলীগ করি
কিংবা কোন বাম দলের। আমি মানুষ, আমি বাঙ্গালী এটাই আমার বড় পরিচয়। কেননা যখন রাস্তা দিয়ে বের হয় তখন যদি দেখি কেউ ক্ষুর্ধাত
তাহলে নিজের হাতের খাবারটি তার হাতে তুলে দিতে বিন্দু মাত্র কার্পণ্য করি না। সে শিয়া, সুন্নী নাকি হিন্দু এইটা পরের ব্যাপার
আগে দেখি সে ক্ষুর্ধাত। আমি ধর্মের নামে রাজনীতি করা একাধিক সংগঠনের মত নিজের
বিবেককে একাধিক করতে পারি না। কেননা মানুষ মাত্রই আল্লাহ পাকের তৈরি। আমি প্রকৃ্ত মুসলাম বলে আল্লাহ তৈরি
করেছে আর যে ক্ষুর্ধাত, সে শিয়া কিংবা কাদিয়ানী বা হিন্দু বলে আমি তার ক্ষুধা
নিবারণ করবো না তা তো ইসলাম ধর্ম শিক্ষা দেয় নি। আমি জানি ভাই অনেকে বিরাগ হবেন আমার উপর কেননা আমি আবার
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করছি কিনা। ভাই সত্যি বলছি আমি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করছি না, আমি ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা
কিছু মানুষের কথা বলছি যারা নিজেদের মধ্যে এক না; যারা নিজেদের জানান দিতে রাজনীতিক মঞ্চে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। যারা মঞ্চে উঠে নারী নেতৃত্ব হারাম
বলে ঘোষণা দিয়ে আবার সেই নারীর আঁচলের সানিধ্য লাভে নিজেকে মত্ত রাখে তারা কিভাবে ধর্ম
প্রচার করে সেইটা আমার বোধগম্য হয় না। ভাই ধর্ম কিন্তু কথা ভাঙ্গিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করা
নয় বরং কথা এবং কাজকে একই সূত্রে গাঁথাই হলো ইসলাম। আবার আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল
যে তাদের স্বার্থ রক্ষার্থে এই ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন গুলোকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে
ব্যবহার করছে এবং তাদের ভুল ধর্ম প্রচারে উৎসাহিত করছে তা তো আমাদের অজানা নয় কারোর
কাছেই। ধর্মকে রাজনীতির সাথে মিশিয়ে ফেলে ভুল ধর্মের প্রচার সেই ১৯৭১-এর পর থেকে শুরু
হলেও এটির বীজ যে আরোও গভীরে গ্রোথিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা তার ফসল আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। কেননা যেখানে দুইটি রাষ্ট্রের ধর্ম
এক হওয়া স্বত্ত্বেও ভুল ধর্ম প্রচার এবং ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করার ফসলই ছিল আমাদের
স্বাধীনতা যুদ্ধ। আমরা ধর্মের সাথে রাজনীতি নামক আবর্জনা মেশানোকে ছাড়তে পারি নি ৩০ লাখ রক্তের বিনিময়েও। আজ স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পরে এসে
আমরা পতাকা পুড়ায়, শহীদ মিনার ভেঙ্গে গর্ব করি কিংবা মসজিদের কার্পেট পুড়িয়ে রাজনৈতিক তথাকথিত ধর্মীয়
কথা বলি কিন্তু একবারের জন্যও ভাবি না যে এই দেশটা আমার আপনার সবার। এখানে ধর্ম যার যার নিজস্ব ব্যাপার
কিন্তু ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা এবং বাঙ্গালী সত্তা একান্তই আমার। যা আমার অহংকার। কিন্তু অবাক হয় যখন দেখি ধর্ম এবং রাজনীতিকে
একই সুতায় গাঁথতে ব্যস্ত এমন কিছু রাজনৈতিক ধর্মীও নেতা নিজেদের স্বার্থে সঠিক ইসলাম
ধর্মকে বিসর্জন দিতে কুন্ঠিত হচ্ছে না বিন্দু মাত্র। এতে কি আমরা ধর্মীয় বিভিন্নতায় জর্জরিত
হচ্ছি না?
আমার তো মনে হয় এই
সব ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতারা এখন ধর্মকে তার নিজস্ব গন্ডি ছাড়িয়ে অধর্মের বাণী শুনাতে
রত। ভাই ইসলাম কিন্তু শান্তির ধর্ম এখানে
ধর্মটায় মূখ্য আর সব কিছু গৌণ্য। আর এই শান্তির ধর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে নিজেদের আর পিছিয়ে
না দিয়ে বরং শান্তি প্রতিষ্ঠা করি। কেননা শান্তিই আনতে পারে প্রকৃ্ত সুখ যে সুখের কথা ইসলাম
ধর্মের পবিত্র কুরানে বলা হয়েছে অনেক বার। ভাই রেষারেষি মারা মারি আমার আপনার ক্ষতি করবে কিন্তু
যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে তাদের বিন্দু মাত্র ক্ষতি করতে পারবে না বরং তারা আরোও
সুযোগ পাবে আমাদের দুর্বলতা দেখে। আর এরই সুযোগ নিয়ে তারা আরোও রাজনীতি করতে উৎসাহিত হবে। তাই আসুন আমরা নিজেদের বিবেক, ধর্ম এবং রাজনীতিকে বুঝতে শিখি। আমরা এই সব ধর্মীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান
গুলোর হাতে নিজেদের পবিত্র ধর্মকে তুলে দিয়ে নিজেদের ইসলামকে আর বিকৃ্ত না করি। কেননা এই সব ধর্মীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান
গুলো বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান হাতিয়ার। আর এই দুই দল ক্ষমতা লাভের জন্য এই
সব ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন গুলোকে ব্যবহার করে আর এই ধর্মীয় রাজনৈতিক দল গুলো তাদের
কথাতে নেচে নিজেদের বিবেককে বিসর্জন দেয়। যার প্রমাণ আমার দেওয়া প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না
কেননা একটু ভেবে দেখেন উত্তর আপনার সামনেই আছে। এত কিছু বলার জন্য আমি দুঃখিত কিন্তু
আমি আজ কিছু দিন নিজের বিবেকের কাছেই স্বাধীন হতে পারছিলাম না তাই বলা। যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আমি
আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
মো. আসাদুল ইসলাম
২য় ব্যাচ
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন