১৪ই জানুয়ারী তারিখে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-২০১৩ সেশনের "বি" ইউনিটের ভাইভাতে আমি
উপস্থিত ছিলাম কিন্তু ভাইভা পদ্ধতি দেখে আমি অবাক হয় কেননা আমার একটা ছোট ভাই
৩১৪তম হয়ে বাংলা সাবজেক্ট পাইলো (যদিও ছোট ভাইটি অর্থনীতিতে জগন্নাথে আছে কিন্তু
তার পছন্দের বিষয় আইন হওয়াতে সে আবার পরীক্ষা দেয়) অপর দিকে ৫০০তম ছাত্রটি ইংলিশ
সাবজেক্ট নিয়ে কি মজাটাই না করলো...আবার ৩১৯তম একটা মেয়ে অনেক আশা নিয়ে জগন্নাথে
ভর্তি হতে এসে বাংলা সাবজেক্ট পেয়ে কি কান্না করলো..ভাইভা ডাকার ক্ষেত্রেও নতুন
নিয়ম দেখলাম যেমন ১ এরপর ৮২ তারপর ৩০০ আবার ২২ আবার ৫০০...এখানে সিরিয়ালের কোন
ব্যাপার দেখলাম না...দুজন চেয়ারম্যান স্যার এই নতুন নিয়মে অভ্যস্ত না হতে পেরে মনে
হলো রাগ করে চলে গেলেন...সর্বশেষ একজন সাংবাদিকের আনাগোনা দেখলাম...এখন আমার
প্রশ্ন এইভাবে চলতে থাকলে আমরা বাহিরে মুখ দেখাবো কি ভাবে...কেননা অনেক বাবা মা
ভর্তির এই নিয়ম দেখে অনেক বাজে মন্তব্য করছিলেন আমারই সামনে কিন্তু আমি আমার
প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কেননা সাম্প্রতিক বিশ্বজিৎ কাহিনী এবং কোন
একটা বিভাগের ৪র্থ বর্ষে পরীক্ষা দিতে এসে ভুয়া পরীক্ষার্থী গ্রেফতারের ঘটনাটি
নিয়ে ব্যঙ্গতে রত আবার কোন বাবা মা নিজের কপালকে ধিক্কার দিতে ব্যস্ত। (দ্বিতীয় ঘটনাটি হয়ত সবাই জানেন না তাই
উল্লেখ করা হলো) কিছু দিন আগে কোন একটা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষাতে একজন
ছাত্রের পরীক্ষা অন্য আরেক ছাত্র দিয়ে দিচ্ছিলেন...উক্ত ছাত্রটি ৩টা বিষয়ের
পরীক্ষা সাফল্যের সহিত বিভাগের স্যারদের সামনে দেন কিন্তু কোন শিক্ষক এই ভুয়া
পরীক্ষার্থীকে ধরতে না পারলেও ৪র্থ পরীক্ষার দিন এই ভুয়া পরীক্ষার্থী ধরা
পরেন...খবরটা খুব ভাল যে ধরা পড়েছেন কিন্তু অবাক লাগে যখন উক্ত বিভাগের চেয়ারম্যান
মহোদয় বলেন এত ছাত্র যে তাদের মনে থাকে না কোনটা আসল ছাত্র আর কোনটা নকল
ছাত্র...মাননীয় চেয়ারম্যান ঠিক বলেছেন কিন্তু বিষয়টি যদি কোন ১ম বর্ষ কিংবা ২য়
বর্ষের ছাত্রের ক্ষেত্রে হত তাহলে আমি মেনে নিতে পারতাম কেননা নতুন ছাত্র বলে
এমনটি হয়ে থাকতে পারে কিন্তু ছাত্রটি ছিল ৪র্থ বর্ষের তাই মেনে নিতে কষ্ট
হয়...কেননা যে ছাত্র গুলো ৫ বছর একই ছাদের নিচে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত
ক্লাস করে তাদের চিনতে কিভাবে কষ্ট হয় আমার তা জানা নেই...আমার তো মনে হয় এটা
আমাদের সাথে শিক্ষকদের একটা কমিউনিকেশন গ্যাপ...কেননা আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক
শিক্ষিকা যখন কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াতেন তখন আমি উদাহরন খুব বেশি দূরে খোঁজার চেষ্টা
করতাম না কারণ
কমিউনিকেশনের বড় বিজ্ঞাপন তো আমরাই (শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কের মধ্যেও এক ধরনের
কমিউনিকেশন থাকে) কিন্তু যখন দেখি একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে চিনতে ভুল করেন তখন তো
মনে হয় এর নামই কমিউনিকেশন গ্যাপ। আর ছাত্র ভর্তির নিয়ম যদি এমন হয় তাহলে তো
কথায় নাই...আমরা এমনিই বাহিরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ের পরিচয় দিলে খুনী
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে ভৎর্সনা করে তারপর আবার ভর্তির এই দশা...এখন আমার ছোট
একটা প্রশ্ন আমরা কি আমাদের ছোট করছি না...অবশ্য অনেক বাবা মায়ের মতে , এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দায়
এড়াতে পারে না। কেননা তাদের
মতে বিশ্ববিদ্যায়ের প্রশাসন দূর্বল ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত আর এর সুযোগ নিচ্ছে কতিপয়
ক্ষমতায় ঠিকে থাকার লোভে মত্ত এক শ্রেণী। আর বিশ্বজিৎ-এর ঘটনাটি তারই বহিঃপ্রকাশ
বলে অনেকে মনে করেন। কেননা যে
ছাত্র গুলোকে বিশ্বজিৎ-এর ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
বহিষ্কার করেছে পূর্বেই তাদের অনেক কুকীর্তি সম্পর্কে অবগত ছিল প্রশাসন কিন্তু
প্রশাসনিক কর্মকতাদের উদাসীনতা এবং এই ছাত্র গুলো দিয়ে কাজ উদ্ধার আজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে...কিছু দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি
প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে দৈনিক জাতীয় পত্রিকা গুলোতে।
যেখানে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত শিক্ষকগণ এই
ধরনের কাজ করেছেন বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে; যার সাথে আমিও এক্যমত পোষণ
করছি দ্বিধাহীন কন্ঠে। সাথে আমার কাছে
আরেকটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়েছে আর তা হলো এর সাথে শুধু মাত্র শিক্ষক শিক্ষিকা নয় বরং
অফিসিয়াল কেরানী চক্রও জড়িত আছে। কেননা উক্ত ১৩ তারিখের ভাইভাতে যখন মূল মেধা
তালিকা ছিঁড়ে আরেকটি মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয় তখন সেখানে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃক প্রকাশিত মূল মেধা তালিকা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন; কেননা নতুন প্রকাশিত
তালিকাতে কোন মেধার সিরিয়াল ছিল না বরং এখানে প্রাধান্য পেয়েছিল রাজনৈতিক নোংরামির
মাধ্যমে মূল মেধা তালিকার শেষে থাকা কিছু ছাত্রের। মূল মেধা তালিকা ছিঁড়ে ফেলার
বিষয়টি আমি ভিডিওতে ধারণ করি এবং আমি নিশ্চিত যে কাজটি একজন অফিসিয়াল কর্মচারী
করেছিলেন। যদিও আমি ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র তারপরও আমি আমার
প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম কেননা এখন বিশ্ববিদ্যালয় মায়ের কোলের মত
নিরাপদ আর নেই। আজ প্রথম আলোর মাধ্যমে জানতে পারলাম ইংরেজি বিভাগে ৭০টা আসন থাকলেও
সেখানে ছাত্র ভর্তি করা হয়েছে ৭৯ জনকে। কিন্তু পরবর্তীতে অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তির
বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় অতিরিক্ত ৯ জনকে অন্যান্য বিষয়ে আবার
মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন এই ভুল গুলো কার, এর সাথে কে কে জড়িত তাদের
বহিষ্কার করা হোক। শুধু মাত্র ছাত্র সংগঠনকে দোষারোপ করে কোন ফয়দা হবে না বরং
আমাদের উচিত হবে যে সব শিক্ষক এই সব চৌর্যবৃত্তির সাথে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির
ব্যবস্থা করা। কেননা আমরা আর পারছি না অপমানের গ্লানি সইতে। একদিকে ছাত্র সংগঠন
গুলোর রক্ত নিয়ে হলি খেলা অপর দিকে এই সব কতিপয় ছাত্র সংগঠন গুলো দ্বারা প্রভাবিত
শিক্ষক ও কর্মচারীদের অত্যাচারে আমরা দিশেহারা। আজ যদি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক
ভিত সত্যিই দুর্বল হয় কিংবা কিছু মুষ্টিমেয় ছাত্র সংগঠন দ্বারা চালিত হয় তাহলে হয়ত
অতীত ভবিষ্যৎতে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় দিতে কুন্ঠিত হব। আর আমার
মনে হয় কোন ছাত্র-ছাত্রী সর্বোচ্চ বিদ্যাপীটে পড়া স্বত্বেও তার অহংকারের, গর্বের বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচয় সংকটে
পড়ুক সেইটা চাইবে না। তাই সবাই আসুন আমরা
আমাদের পরিচয়কে শুধু মাত্র কিছু মানুষের হাতের লাগাম না বানিয়ে বিশ্ব দরবারে
প্রতিষ্ঠা করি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে।
মো. আসাদুল ইসলাম
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,
২য় ব্যাচ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন