জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৩

কোটা প্রথা ও কিছু কথা


বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আবার অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে; অবশ্য আমি বলবো এখানে অস্থিতিশীলতা তার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে না এসে বরং কিছু ভুল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে শুরু করেছেআর যার ফলাফল এখন বর্তমানকোটা পদ্ধতির সাথে পাল্লা দিয়ে চলা নিয়োগ বাণিজ্য শুধুমাত্র যে আমাদের দেশের ছাত্র ছাত্রীদের চাকুরীর ক্ষতি করছে বিষয়টি এখন আর এমন নেই বরং এটা এখন জাতিকে (প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ ছাত্র ছাত্রীর) মানসিক বিকলঙ্গ করে প্রবেশ ঘটাচ্ছে অপসংস্কৃতি নামক এক আজব সংস্কৃতির
এই কোটা বিরোধী আন্দোলন হওয়া স্বত্ত্বেও খুব আর্শ্চাযজনক একটা চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি দেখলাম (bpsc.gov.bd 10/07/2013) তাও আবার বাংলাদেশের সরকারি সিদ্ধান্তের চাকুরীর বিজ্ঞাপন (বিপিএসসি নন-ক্যাডার)যেখানে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাই আবেদন করতে পারবেআজ আবার শাহাবাগে ৩৪তম বিসিএস-এ অনুত্তীর্ণ ছাত্র ছাত্রীরা আন্দোলন করছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের জন্য; সেখানে আবার বিপিএসসি-র এই ধরনের সিদ্ধান্ত আমার তো মনে হয় এই আন্দোলন শুধু মাত্র বিসিএস ফলাফলে অনুত্তীর্ণ হওয়ার জন্যই নয় বরং এতে করে এদেশের মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের মেধার হিসাবও বের হয়ে আসতেছেআর যদি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এই যোগ্যতার রূপ বের হয়ে আসে তাহলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যে মুখ দেখাতে পারবে না তা সহজেই অনুমেয়আর সরকার কোটা নামক যে খেলায় মত্ত তা যে তাদের রাজনৈতিক জীবনে ভয়াবহ দুর্যোগ হয়ে দেখা দিবে তা দেখার অপেক্ষাতে আমি প্রতিটি সময় এখন অতিক্রম করছি কারণ যদি দেশে ২ লাখ শিক্ষার্থী থাকে তার মধ্যে যে ৭০০ জন (২৫০০-র মধ্যে) কোটায় চান্স পাচ্ছে এর মধ্য থেকেই ৩৫০ জন আওয়ামীলীগকে ভোট দিবে নাকেননা এখানে বিভিন্ন দলের মানুষ আছেফলশ্রুতিতে হিসাব করলে দাঁড়ায় ৩৫০ জন + ১৯৭৫০০ জন (১৫০০ সিট হলে ২,০০,০০০ ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে ১,৯৭,৫০০ জন বাকী থাকে) = ১,৯৭,৮৫০ জন এই সরকারকে কোন ভাবেই ভোট দিবে না সাথে তো পারিবারিক ভোট তো আছেইঅর্থাৎ আওয়ামী লীগ মাত্র ৩৫০ টা ভোট পাওয়ার জন্য অন্ধের মত দৌঁড়াচ্ছে অপরদিকে যে ১,৯৭,৮৫০ টা ভোট তাদের ভুল সিদ্ধান্তে হারাচ্ছে তা বুঝা তাদের পক্ষে কোন ভাবে সম্ভব হচ্ছে না
আবার বর্তমান শিক্ষা ক্ষেত্রে কোটার পাশাপাশি আরো একটি আজব সিস্টেম চালু আছে; যার নাম প্রশ্ন ফাঁস (অগ্রণী ব্যাংকের প্রশ্নপত্র ফাঁস ০৩/০৫/১৩; সূত্রঃ প্রথম আলো)যেখানে একদিকে কোটা পদ্ধতির কারণে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা চাকুরী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত সেখানে আবার প্রশ্ন ফাঁসের রীতি চালু আছেএর ফলে এখন দেখা যায়, একটা চাকুরীতে মোট ১০০%-এর মধ্যে ৪৫% থাকে কোটা + ২০% থাকে প্রশ্ন ফাঁস এবং ১০% থাকে সরকারি সুপারিশঅর্থাৎ বাকী মাত্র ২৫% থাকে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীর জন্য বরাদ্ধযাদেরকে আবার ক্ষেত্র বিশেষে এই ১০০%-এর সাথেই লড়াই করে চান্স পেতে হয়কি হাস্যকর একটা বিষয়
যদিও এত দিন শাহাবাগ চত্বরের আন্দোলনকে মনে করা হত মুক্তিযুদ্ধের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন; এখন সেই শাহাবাগে শুরু হয়েছে বিভিন্ন চাকুরীর কোটা বাতিল আন্দোলনযার মধ্যে একটি অন্যতম কোটা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটাযে সব মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মেয়েরা শাহাবাগ আন্দোলনে এত দিন অংশগ্রহণ করে আন্দোলনকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিলেন তাদের বোধ হয় কাল থেকে আর পাওয়া যাবে নাএতে গণজাগরণ মঞ্চ যে তার অস্থিত্ব সংকটে পরবে তা বলাই বাহুল্যযদিও অনেকে শাহাবাগ চত্বর নিয়ে অনেক ধরনের ধারণা পোষণ করেন কিন্তু আমি সেই সব বির্তকে না গিয়ে অতি সাধারণ ভাবে বলার চেষ্টা করছি যে শাহাবাগ চত্বর এত দিন মুদ্রার এপিঠ দেখিয়েছে এখন অপর পিঠ দেখানোর চেষ্টা করছে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরাযাদের হয়ত মুক্তিযুদ্ধের সার্টফিকেট নেই কিন্তু এখন দেশের উন্নয়নে যে প্রকৃত জিনিসটি লাগবে সেইটা আছেআর তা হলো মেধাকেননা বিশ্ব চলছে মেধা দিয়ে,  কোঠা দিয়ে নয় তাই আসুন এই ভাবে মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের সাথে প্রতারণা না করে বরং দেশের স্বার্থে তাদের মূল্যায়ন করতে শিখি। আর যত দিন না আমরা তা না পারবো তত দিন আমাদের মধ্যে যেমন মনুষ্যত্ব বোধের অভাব দেখা দেবে। ফলশ্রুতিতে আমরা জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবো না বিশ্ব দ্বরবারে।  



মোঃ আসাদুল ইসলাম (২য় ব্যাচ)
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জবি।


কোন মন্তব্য নেই: