সেই দিন রাতে চায়ের দোকানে আড্ডা শুনে খুব মজা পাইলাম...কেননা সেখানে দুই
পক্ষই যথেষ্ট কথার যৌক্তিকতা দিয়ে তার মতামতকে প্রতিষ্ঠা করতে রত। বিষয়টি ছিল এমন যে
সমাজের শ্রেনী বিভাগ এবং তাদের মধ্যে শ্রেণীগত
বৈষম্যের বিশ্লেষণ। তাদের মধ্যে একজন
বললো সমাজে তিনটা শ্রেণী বিদ্যমান।
১। ধনী
২। মধ্যবিত্ত এবং
৩। দরিদ্র্য।
এখানে এই কথা
বলার সাথে সাথে আরেকজন তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো এবং বললেন ভাই বলেন তো, এদের মধ্যে শ্রেণীগত বৈষম্য থাকে না কখন? তখন তো একেক জন একেক
রকম বলতে শুরু করলো...হঠাৎ একজন বললো কবরে যাওয়ার সময় ধনী গরিব বলে কোন ব্যবধান থাকে
না...সে বললো আপনি কেন এই উত্তর দিলেন যুক্তি দেখান। তখন সে পাল্টা যুক্তিতে বললেন সবাইকে এক মাটির নিচেই যেতে হবে এবং একই প্রক্রিয়ায়। তখন প্রশ্ন দাতা বলে
তাহলে ধনী শ্রেণীর কেন মিরপুর, আর গরিব শ্রেণীর বেশির ভাগ কেন আজিমপুরে কবর হয়। আমি বিষয়টি ভেবে দেখলাম
আসলে তো এর মধ্যেও স্ট্যাটাস বা শ্রেণী বিদ্যমান। তখন প্রশ্ন দাতার কাছে উত্তর দাতা জানতে চাইলেন আপনি উত্তরে কি বলতে চান? সেই প্রশ্ন উত্থাপনকারী তখন বললেন, মসজিদে কোন শ্রেণী বিভাজন থাকে না। তখন সবাই এই কথার যৌক্তিকতা
জানতে চাই। প্রশ্ন উত্থাপনকারী সেই ভাইটি তখন বললেন মসজিদে কে ধনী আর কে গরিব তা বিবেচ্য বিষয় হয় না। হঠাৎ ঐ মুহূর্তে এক
জন বলেন আপনার কথা ঠিক আছে কিন্তু
তাহলে আমার একটা কথার উত্তর দিবেন। ঐ ভাইটি বলে...বলেন কি বলবেন। সেই লোকটি বলে তাহলে ঈদের নামাজে কিংবা মসজিদে নামাজ পরতে গেলে
সমাজের ধনী শ্রেণীর জন্য প্রথম কাতার বরাদ্ধ রাখা হয় কেন? অনেকে হয়ত বলবেন তাদের সম্মান দেখানো হয় অথবা ওনারা আগে আসেন। ঠিক আছে কিন্তু আমি
তখন চিন্তা করলাম সব ধনী শ্রেণী যে আগে আছে তা তো ঠিক না...তবুও তাদের জন্য প্রথম কাতার
বরাদ্ধ রাখতে আমি নিজের চোখে দেখেছি এবং দরিদ্র্য ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী তাদের পিছে বসে। ক্ষেত্র বিশেষে মধ্যবিত্তরাও
সামনের কাতারে চান্স পাই...তাহলে যে মসজিদেও শ্রেণীর বিভাগ আছে তা সহজেই অনুমেয়।
আমাদের সমাজ,
ধর্ম, সংস্কৃতিও যে শ্রেণী
বৈষম্যের কাছে বন্দি তা এই চায়ের দোকানের ভাইদের ছোট পরিসরের আলোচনাতে উঠে আসলো। আর আমরা না যত দিন
এই শ্রেণী দাসত্ব থেকে মুক্তি না পাবো তত দিন যে আমাদের মধ্যে ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃ্তিক
মুক্তি সম্ভব না তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন কিছু অল্প শিক্ষিত মানুষ (কেননা
তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নাই বললেই চলে, আমি তাদের সাথে
আলাপ করে জেনেছি)। আর এই থেকে বোঝা যায় মানুষের মাঝে সচেতনতা আসছে। আর যখনই এই সচেতনার কথা মাথায় এসে যায় তখনই
মনে পড়ে জার্মান তাত্ত্বিক কার্ল মাক্সের কথা। কেননা তিনি বলে গেছে যখন পুঁজিবাদীদের শোষণের
ফলে শোষিত শ্রেণীর মধ্যে সচেতনতা আসবে তখন সমাজে বিপ্লব অনিবার্য। আর এই বিপ্লব হওয়ার
আগে তাদের মধ্যে শ্রেণী সচেতনতা আসবে। যা আমি গতকাল দেখেছি কিছু খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে। কার্ল মাক্স বলেছে
এই বিপ্লবের ফলে নতুন সমাজের উদয় হবে; যার নাম দিয়েছে
সমাজতান্ত্রিক সমাজ। এখন আমার প্রশ্ন যদি আমরা বাংলাদেশের ভিত্তিতে বিষয়টি দেখি এবং গতকালের বিষয়টি
মিলিয়ে দেখি তাহলে কি বলতে পারি না যে বাংলাদেশেও বিপ্লব অনিবার্য। যদি তাই হয় তাহলে এর
মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদের অহং ভেঙ্গে যাবে নাকি রাজনৈতিক পুঁজিবাদের অহং ভেঙ্গে যাবে। আর যদি দুইটার যে কোন
একটা ঘটে তাহলে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। কেননা আমরা গণতান্ত্রিক সমাজের চর্চা করি। এখানে সমাজতান্ত্রিক
সমাজ আসার সম্ভবনা নাই বললেই চলে। তাহলে কি এদেশে সেনাবাহিনী শাসিত স্বৈর শাসন আসবে। তা আসতে পারে। কেননা ১৯৭১-এর পর মাত্র
বিয়াল্লিশ বছরে এদেশে দুই বার স্বৈর শাসনের কবলে পড়ে। যাতে শেষ হয় প্রায় ১৫ বছর। অর্থাৎ বাংলাদেশের
৪২ বছর জীবনের মাত্র ২৭ বছর ছিল স্বাধীন। না কি ১৯৭১-এর সেই বিপ্লবের ফসল। আর যদি ৪২ বছরের মধ্যে দুই বার স্বৈর শাসক
ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে কি ভবিষ্যতেও এমন কিছু অপেক্ষা করছে!!!না কি এই বিপ্লব হবে
Human Emancipation।
যদি Human emancipation হয় তাহলে হয়ত তো ভালো
আর যদি আমরা আমাদের ভুলে আবার Dictator-হাতে ক্ষমতা
তুলে দিই তাহলে আমাদের বিপ্লবের মুক্তিটা আসবে কি ভাবে? আমি মনে করি আমাদের মধ্যে যে শ্রেণী সচেতনা জাগ্রত হয়েছে তাকে যেন কোন ভাবেই রাজনৈতিক
হাতিয়ার বানানোর সুযোগ করে না দিই বরং সর্বদাই মনে রাখি এই শ্রেণী সচেতনতা আমাদেরকে
উপলব্ধি করতে শেখাবে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। তাই আসুন আমরা আমাদের শ্রেণী সচেতনতার পুঁজিকে
হাতিয়ার বানিয়ে দেশকে জাতিকে গনতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসি এবং প্রতিষ্ঠা করি
সোনার বাংলা। এখানে মুখ্য ভুমিকাটা রাখতে হবে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র্য শ্রেণীকে। কেননা ধনী শ্রেণী সর্বদা
চাইবে পার্থক্যটা বিদ্যমান থাকুক এবং তারা এর ফরদা লুটে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলুক...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন